দায়িত্বশীল সরকার ও তার সিদ্ধান্ত, ইত্তেফাক
বর্তমান সরকার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতিসহ দেশের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরো জোরদারে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণকে অধিকতর শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সরকার এ দেশের উন্নয়নের গতিকে আরো ত্বরান্বিত করতে চায়। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। প্রয়োজন জনগণের সহযোগিতার।
বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার তথা গণপরিবহন সেবার উন্নয়নের বিকল্প নেই। গণপরিবহন শুধু মানুষের যাতায়াতের পথকেই সুগম ও সহজসাধ্য করে তোলে না বরং নানামুখী যানবাহনের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন ব্যয় সাশ্রয়ী করে গতি সঞ্চার করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হয়। দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই, স্বাধীনতা পরবর্তী গত কয়েক বছরে দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তবে সফলতার পাশাপাশি সমস্যা এখনও বিদ্যমান।
সিএনজি চালিত অটোরিক্শার যাত্রীদের নিকট থেকে মিটারে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি আদায় ঠেকাতে মালিক ও চালকদের ওপর ‘কড়া নজরদারি’র সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি। গত রবিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশটি করার মধ্য দিয়ে এটি বোঝা গেলো যে বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট মহল বা সরকারের নজর রয়েছে।
রাজধানীতে সিএনজি অটোরিক্শার প্রয়োজনীয়তা যেমন রয়েছে, তেমনি যানটির চালকদের নৈরাজ্যও কম নয়। চালকরা ইচ্ছে হলে যাত্রীদের ডাকে সাড়া দেবেন, দাবিকৃত বাড়তি ভাড়া না পেলে যাবেন না। স্বল্প-দূরত্বে যেতে তাদের অনীহার শেষ নেই। দিনের পর দিন রাজধানীবাসী সিএনজি অটোরিক্শা চালকদের খেয়ালখুশির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমবেশি জানলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এ বাহিনীর সদস্যরা না দেখার ভান করছেন। ফলে প্রায় প্রতিদিনই অটোরিক্শা চালকদের কাছে নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। নির্যাতনের শিকারও হচ্ছেন কেউ কেউ। অথচ সরকার ও প্রশাসন ইচ্ছা করলে স্বল্পসময়ের ব্যবধানে এ সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
সংবাদপত্রের বদৌলতে জানা যায়, কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, নতুন ভাড়া নির্ধারণের পর কিছুদিন পর্যন্ত চালকরা সঠিক ভাড়া নিচ্ছিল। এখন আবার আগের মতো শুরু করেছে, যাত্রীদের হয়রানিও বেড়েছে। এজন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে কঠোর হওয়ার সুপারিশ করেছে। মালিকরাও চালকদের কাছ থেকে সরকারি নির্দেশনার চেয়ে বেশি টাকা নেয়। এজন্য মালিকদেরও নজরদারির আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।
অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। আমার বিশ্বাস মালিকদের ওপর কড়া নজরদারি করা হলে পরিস্থিতি পাল্টাতে বাধ্য। আর সবকিছু ঠিকঠাক মতো চললে যাত্রীরা হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে। তার ফল কিন্তু বর্তমান সরকারের ঘরেই যাবে। দেশের সাধারণ জনগণের জন্য পরিবহন সুবিধা আরো বাড়ানোর দাবি বরাবরই ছিল। সে সুবিধা এখনো পুরো নিশ্চিত না হলেও সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে জটিলতা কমেছে। কিন্তু গণপরিবহন বিশেষ করে বাস, সিএনজি অটোরিক্শায় হয়রানি এখনো বন্ধ হয়নি। এ হয়রানি বন্ধে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হলেও শুধু নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে সেটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। সমস্যা তিমিরেই রয়ে গেছে।
বর্তমান সরকারের আমলে সাধারণের কল্যাণে সবচেয়ে বেশি সচেতন ও সতর্ক রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বাধীন এ সরকারের ওপর জনগণের আস্থা যেমন বেশি তেমনি প্রত্যাশাও কম নয়। তিনিও অহোরাত্রি জনগণের কল্যাণে নিবেদিত থেকে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। জনগণের কথা বিবেচনা করেই সরকার জনগুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষেত্রে পরিবর্তনের স্বাক্ষর রাখতে সচেষ্ট রয়েছেন। জনগণের কথা বিবেচনা করেই সরকার পদ্মা সেতু তৈরির মতো চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মহলের সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে। দেশের কিছু মানুষের প্ররোচনায় পদ্মা সেতু নিয়ে বিনা কারণে যে দুর্নীতির কথা তুলে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে এসে বিশ্বাঙ্গনে বাংলাদেশের মাথা উঁচু হয়েছে। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো কাজ শুরু করার সাহস দেখানোর ফলে বাংলাদেশের মানুষ আজ তাদের প্রত্যাশিত বিজয়ের দিকে যেতে পারছেন।
শুধু পদ্মা সেতু কেন দেশের মানুষের শিক্ষা-স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অর্থনীতি, বাণিজ্যসহ সব সেক্টরে সরকারের যে কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে তা নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। শিক্ষা খাতে এ সরকারের আমলে আমূল পরিবর্তন এসেছে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে স্বাস্থ্যসেবায় দৃশ্যমান পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। যোগাযোগ খাতে ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ রেলওয়েকে যেভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে তা জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্বশীলতার কথাই প্রমাণ করে।
বিদ্যুত্ খাতের ব্যাপক উন্নয়নের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশে একসময় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। আজ লোডশেডিং তো নেইই, উল্টো বিদ্যুত্ প্রবাহ বেড়েছে। এখন আর জনগণের বিদ্যুত্ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। এসবই সরকারের অবদান। আজ দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা শব্দটি হারিয়ে গেছে। শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, দেশের সব অঞ্চলে পরিবর্তনের যে হাওয়া লেগেছে তা প্রমাণ করে জনগণের জন্য সরকার কতটা নিবেদিত।
সরকারের উন্নয়নশীল বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসন দিতে সমর্থ হয়েছে। তাই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার এ বিষয়কে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকারের হাতকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। জনগণও বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে তার কোনো তুলনা চলে না। এ অতুলনীয় অবদানের জন্য বর্তমান সরকার সাধুবাদ পেতেই পারেন। মোটকথা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার জন্য সরকারের হাতকে শক্তিশালী করা এখন সময়ের দাবি। সেজন্য জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে। একমাত্র জনগণই পারে সরকারের সঙ্গী হয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখতে।