সড়ক সংস্কারে সংসদীয় কমিটির সুপারিশও উপেক্ষিত!
চলমান বর্ষায় দেশের বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের যে ক্ষতি সাধিত হয় তা তাত্ক্ষণিকভাবে মেরামতের ব্যবস্থা করে যান চলাচলের উপযোগী করার সুপারিশ করেছেন সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। একই সঙ্গে মহাসড়কে ক্ষমতার অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক চলাচল করে যাতে রাস্তার ক্ষতিসাধন করতে না পারে সেদিকে কঠোর নজরদারিরও সুপারিশ করা হয়। সংসদীয় কমিটির এ সুপারিশ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও জনকল্যাণমূলক নিঃসন্দেহে। এ ধরনের সুপারিশ অনুসরণ করা হলে চলাচলের ক্ষেত্রে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হবে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। যারা এই নির্দেশনা অনুসরণ করে জনগণের জন্য চলাচল উপযোগী সড়ক গড়ে তুলতে ব্যবস্থা নেবেন তাদের মধ্যে অনেকেরই সদিচ্ছার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ২৬ জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ঘোষিত এ সুপারিশ নিয়ে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এরই মাঝে প্রায় ২৩ দিন অতিবাহিত হলেও রাজধানীর কোনো সড়কেই মেরামতের কাজ শুরু হয়নি। বরং খানাখন্দ এবং ভাঙাচোরা রাস্তার সংখ্যা আরো বেড়েছে। যার কারণে প্রায়ই নগরবাসীকে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। রাজধানীর প্রধান অনেক সড়কেই এখন জান হাতে করে পথ চলতে হয়। পানিভরা গর্তের পানি ছিটকে প্রতিদিনই শত শত পথচারী নাস্তানাবুদ হচ্ছেন। বিভিন্ন সড়কে গর্তে পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি বা প্রাইভেট কারের যাত্রীরা হরহামেশা নাজেহাল হচ্ছেন। দেশের প্রায় সব স্থানেই ক্ষতবিক্ষত সড়কে পথ চলতে গিয়ে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায়ও ভুগছেন অনেকে। মাসের পর মাস এ চিত্র দেখা গেলেও এর সমাধান যেন সুদূর পরাহত।
এসব ঘটনা নিয়ে বা সড়কের হালহকিকত নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংবাদপত্রে রিপোর্ট বেরুচ্ছে। টিভি চ্যানেলে সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হচ্ছে। যাত্রী বা পথচারীদের অভিযোগেরও অন্ত নেই। কিন্তু তার কোনো ফলাফল এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রাজধানীর রামপুরা থেকে মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর পর্যন্ত এলাকার সড়কে যে বেহাল অবস্থা গত একাধিক বছর যাবত্ দেখা যাচ্ছে তার ইতি কবে ঘটবে তা কেউ জানে না। অথচ এটি রাজধানীতে চলাচলের একটি অন্যতম সড়ক। এই সড়কের একটি অংশ জুড়ে ফ্লাইওভারের কাজ চলছে কয়েক বছর যাবত্। এ কাজ শুরু হওয়ার অব্যবহিত পর থেকে চৌধুরীপাড়া থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত সড়কটি একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। রাজধানীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলো আগারগাঁও থেকে মিরপুর। এই সড়কটির এক পাশ গত কয়েকমাস যাবত্ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই মিরপুরগামী কয়েক লাখ মানুষ শুধু সড়ক সঙ্কটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে ধুঁকতে থাকেন। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, সায়েদাবাদ, উত্তরা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে থাকা সড়কগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। প্রায় একই চিত্র কমবেশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। আঞ্চলিক সড়কগুলোর অবস্থা আরো বেহাল। সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় সড়ক বলে কিছু আছে এমনটি বলা যাবে না। এ নিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কোনো উদ্যোগও তেমন দেখা যায় না।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এমন অনেক ওয়ার্ড আছে যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এসব বিষয়ে কাউন্সিলরদের নজরে একাধিকবার আনার পরেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি লক্ষ করা যায়নি বলে অভিযোগ আছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন অনেক ওয়ার্ডের সড়কে বছরের পর বছর ধরে কাজ হয় না। ফলে বর্ষাকালে ভাঙাচোরা রাস্তায় পানি জমে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। কাদা-পানিতে নাস্তানাবুদ হতে হয় বসবাসকারীদের। অথচ দায়িত্বশীলরা দেখেও এ সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।
মহাসড়কে ক্ষমতার অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক চলাচল করে রাস্তার যে ক্ষতিসাধন করে সেজন্য আজ পর্যন্ত ক’টি ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা কি আমাদের সংসদীয় কমিটি বলতে পারবেন? দেশের বিভিন্নস্থানে স্কেল বসানো হয়েছে, কোনো ট্রাক ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত মাল বহন করছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। কিন্তু তাতে কোনো কার্যকর সুফল এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কখনো কখনো লোকদেখানো দু’একটি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তার কোনো ধারাবাহিকতা রক্ষা হয় না। অভিযোগ আছে ট্রাকে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত মাল বোঝাই করা হয়েছে কি না সেটি পরীক্ষা করার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল পক্ষ নগদের বিনিময়ে ট্রাকগুলো ছেড়ে দেয়। রাজধানীসহ সারাদেশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের ট্রাক বা বিভিন্ন যানবাহন থেকে ‘নগদ পাওনা’ নেওয়ার বিষয়টি কিছুক্ষণ সড়কে থাকলেই দেখা যায়। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ট্রাক চলাচলের কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ বিষয়টি এড়িয়ে চলছেন অধিকাংশ সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির এ সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলো কি হলো না সেটি অবিলম্বে মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করা দরকার সংসদীয় কমিটির। জনগণের জন্য কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগের যে যাত্রা সে পথচলায় কোনো বাধাই যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।