এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে উঠলে এটাকে আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বলতে পারি।

দীর্ঘস্থায়ী ও সুদৃঢ় সম্পর্ক দুটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। বাণিজ্য, সুশাসন, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়- এই নীতি অনুসরণ করে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। বন্ধু রাষ্ট্রের তালিকা দিন দিন আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে।

রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আমাদের স্মরণ করতে হবে জাপানকে। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ ও জাপান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। জাপান আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জাপানের অবদান অনন্য উচ্চতায়। সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জাপান সরকার প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা এবং টেকনিক্যাল অ্যাসিট্যান্স দিয়ে আসছে। দেশটির সরকার বাংলাদেশকে পাঁচটি প্রকল্পে মোট প্রায় ১.২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। ওই ঋণ সহায়তা নামমাত্র সুদে (০.০১ শতাংশ) ৪০ বছর সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, প্রাকৃতিক গ্যাসের যথাযথ ব্যবহার, স্থানীয় সরকার উন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণ, হাওর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জীবনমান উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের কৃষি উৎপাদনশীলতা উন্নয়নে এই ঋণ সহায়তা প্রদান করা হবে। রাজধানীতে মেট্রো রেলের মতো বড় প্রকল্পেও এগিয়ে এসেছে জাপান। উত্তরা থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত মেট্রো রেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকাই আসবে বৈদেশিক সহায়তা থেকে। বাকি পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আসবে সরকারি অর্থায়নে।

গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরাশক্তি। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক বহু পুরনো এবং বলিষ্ঠ। চীন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে এবং নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতা করে আসছে। নব্বই-পরবর্তী চীনা অর্থনীতির উন্নয়ন এই সম্পর্কের মাত্রা আরো বেগবান করেছে। বাণিজ্যের প্রসার, সহজ ঋণ, সামাজিক যোগাযোগ, সংস্কৃতি বিনিময়, শিক্ষা সম্পৃক্ততা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সামরিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ রেখে চলছে বর্তমান সরকার। উল্লম্ফন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং শ্রমের মূল্য অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় চীনের শ্রমঘন উৎপাদনব্যবস্থা পুঁজিঘন উৎপাদনব্যবস্থার দিকে প্রভাবিত হচ্ছে। শিল্প বিনিয়োগে বেইজিংয়ের আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজারের বর্তমান অবস্থা ধরে রাখার জন্য চীনা বিনিয়োগকারীরা দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাঝখানে বাংলাদেশের সহজলভ্য শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে চাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ। অন্যান্য সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উল্লেখ করার মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের আগেই দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ দেওয়া হয় চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজকে। বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে চীন-বাংলাদেশ সরাসরি গার্মেন্টশিল্পে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। বেইজিংয়ে ৯ জুন পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, যার অন্যতম বরগুনার রামনাবাদে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন। চীনের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা। প্রধানমন্ত্রীর সফরে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হয়। আরো দুটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়, যার একটি হলো চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনভিত্তিক টানেল নির্মাণ। চীন এ প্রকল্পে সহজ শর্তে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। দেশে টানেল বা এ ধরনের সুড়ঙ্গপথ হবে- এটাই প্রথম।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। সন্ত্রাসবাদ দমন, সীমান্ত সমস্যার সমাধান, তিস্তার পানি বণ্টন, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি- এমন বহুবিধ বিষয়ে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের রাষ্ট্রীয় সফর বাংলাদেশের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যেখানে আছে, সেখানে থেকেই নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায়। তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সন্ত্রাস, চরমপন্থা ও মৌলবাদ মোকাবিলায় ভারত-বাংলাদেশের সহযোগিতা আরো দৃঢ়করণের কথা বলেন। সার্কভুক্ত দেশগুলোর উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত দাতা রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের সামাজিক ক্ষেত্র, যেমন- আইটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ভারতের আগ্রহ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দুই দেশের উষ্ণ সম্পর্ক বলবৎ থাকলে মিউচ্যুয়াল বেনিফিট পাওয়া যাবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথমবারের মতো ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযুক্ত গ্রিডের মাধ্যমে বাংলাদেশে রপ্তানি হচ্ছে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। একইভাবে রেলওয়ে ডেভেলপমেন্ট, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন উন্নয়নে ভারতের আগ্রহ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করেছে। ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘদিন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মূল ভিত্তি আস্থা, সদ্ভাব ও অংশীদারি। দুই দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সাম্য, সমতা, স্থিতিশীলতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে তা এগিয়ে নেওয়া দুই দেশেরই লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। উষ্ণ ও কার্যকর সম্পর্ক বজায় থাকলে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় ইস্যু ও চ্যালেঞ্জগুলো সামনে রেখে এবং সামষ্টিক মনোভাব নিয়ে সম্পর্ক শক্তিশালী করলে দুই দেশেরই উপকার হবে। এ ছাড়া পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সচেতনতা তৈরি এবং ব্যাপকভিত্তিক তথ্য বিনিময়ের জন্য দুই দেশের শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী, পরিবেশবিদ, করপোরেট ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিরও প্রয়োজন রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে অধিকতর ভালো। এই সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন।

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া অন্যতম। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় থেকেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেছিলেন। ঠিক তার চার দশক পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রাশিয়া যান। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের রাশিয়ায় এটি দ্বিতীয় সফর। নানা কারণে এ সফর রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। সফরে দুই হাজার মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১০০ কোটি ডলারের সমরাস্ত্র কেনাসহ তিনটি চুক্তি ও ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক। বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর সফরে সেই সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সাহায্যের জন্য ১৯৭১ সালের ৬ ও ১৩ ডিসেম্বর নিউক্লিয়ার মিসাইলবাহী নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ পাঠায়। স্বাধীনতাযুদ্ধে রাশিয়া এভাবেই বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বের অনবদ্য নজির দেখিয়েছিল। তখন থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের শুরু। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় দেশটি; কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালে নৃশংস হত্যার পর এই সম্পর্কে চরম ভাটা পড়ে। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলে সম্পর্ক আবারও নতুন ছন্দ পায়। তার আগেই অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গঠিত হয় আধুনিক রাশিয়া। ঢাকায় এরপর সমরাস্ত্রের একটি প্রদর্শনীও হয় ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে। ফলে চীনের পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশি পণ্যের একটা বড় বাজারে পরিণত হয় রাশিয়া। রাশিয়ায় যেসব পণ্য বাংলাদেশ রপ্তানি করে তার মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি, চামড়াজাত পণ্য ও ওষুধ। প্রধানমন্ত্রীর সফর রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত বড় বাজার সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে আলোচিত ছিল অস্ত্র কেনা চুক্তি। নিন্দুকেরা যা-ই বলুক না কেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বিশাল সমুদ্র বিজয়ের পর তার সুরক্ষায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা সংক্রান্ত মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। সমুদ্রের এই বিশাল অংশে গ্যাসসহ নানা মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে। এসব মাথায় রেখেই সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর জন্য ওই অস্ত্র ক্রয় চুক্তি করা হয়। রাশিয়া সফরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য অর্থনৈতিক, কারিগরি ও প্রযুক্তি সহায়তা। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাসংবলিত তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুটি ইউনিটের সমন্বয়ে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ইউনিটের জন্য খরচ হবে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ডলার। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ হবে ৬০ বছর। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার এ সফর ছিল দীর্ঘ ৪০ বছর পর বাংলাদেশের কোনো শীর্ষ নেতার রাশিয়া সফর। তাই এটি কোনো সৌজন্য সফর ছিল না। সম্পর্কের গভীরতা ইঙ্গিত দেয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর। প্রধানমন্ত্রী মস্কো সফরে সমরাস্ত্র কেনা ও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে দেশি মুদ্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার এ দুই ঋণ চুক্তি হয়েছে। সমরাস্ত্র কেনার চুক্তিটি আট হাজার কোটি টাকা, যা ঋণ হিসেবে দেবে রাশিয়া। এর সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দেবে আরো চার হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সন্ত্রাস দমনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

ক্ষুদ্র ভূখণ্ড, কিন্তু বিশাল জনসংখ্যার এই বাংলাদেশের প্রয়োজন অত্যন্ত দক্ষ, সুচিন্তিত ও উদ্ভাবনী বৈদেশিক নীতি, যাতে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সর্বোচ্চ আর্থসামাজিক সুবিধা আদায় করা সম্ভব হয়। সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈদেশিক নীতির প্রতিফলন ঘটে বহুলাংশে, যেখানে নিরাপত্তা ও উন্নয়ন প্রাধান্য পায়। নিরাপত্তা বলতে শুধু ভৌগোলিক নিরাপত্তাই নয়- ব্যক্তি, পরিবেশ, পানি, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা বেশি প্রণিধানযোগ্য। উন্নয়ন বলতে আমরা বুঝব এমন একটি পরিবেশ ও ভৌত কাঠামো, যেখানে বৈদেশিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়, যেন জাতীয় বাজেট এবং সরকারি উন্নয়ন সহায়তা দারিদ্র্য বিমোচন-দূরীকরণ, অপুষ্টি, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে ভিশন-২১ সামনে রেখে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পারাটাই হবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য।

লেখক : প্রোভিসি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি